কলকাতা সংবাদদাতা:
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার ভিডিও কনফারেন্সে প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই বৈঠকে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের মতামত জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। সূত্রের খবর, বৈঠকে মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, বিহার এবং পশ্চিমবাংলার তরফে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানানো হয়।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে তো বলেই দেন, এই অবস্থায় লকডাউন বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। লকডাউনের পক্ষে সওয়াল করেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, দ্বিতীয় দফার লকডাউনের মেয়াদ রয়েছে ১৭ মে পর্যন্ত। এর মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে লকডাউন শিথিল করেছে কেন্দ্র। তা হলে এমন লকডাউনের অর্থ কী?
মুখ্যমন্ত্রীদের মতামত জানার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লকডাউন বাড়ানো নিয়ে কেন্দ্রের ইচ্ছে সম্পর্কে সরাসরি কোনও ইঙ্গিত দেননি। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যগুলির মতামত শুনে প্রধানমন্ত্রী মোদিও লকডাউন বাড়ানোরই পক্ষপাতী। রাতের খবর, ৩১ মে পর্যন্ত তৃতীয় দফার লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে আর্থিক সাহায্যের দাবি করেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়–সহ আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই আর্জি বিবেচনা করে দেখবেন।এর পর এদিন রাত নটায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন একটি টুইট করে জানিয়ে দেন, ১৪ রাজ্যের জন্য ৬ হাজার ১৯৫ কোটি টাকার (ভারতীয়) আর্থিক প্যাকেট বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ৬ হাজার ১৯৫ কোটির মধ্যে পশ্চিমবাংলা পাবে ৪১৭.৭৫ কোটি টাকা। পশ্চিমবাংলা ছাড়া অন্য যে সব রাজ্য এই প্যাকেজ পাচ্ছে, সেই রাজ্যগুলি হল মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, কেরল, পঞ্জাব, সিকিম, অসম, মণিপুর, উত্তরাখণ্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, তামিলনাড়ু এবং ত্রিপুরা।
সবচেয়ে বেশি টাকার প্যাকেজ পাচ্ছে কেরল। তাদের দেওয়া হচ্ছে, ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, ১৫তম অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে এই সাহায্য দেওয়া হচ্ছে রাজ্যগুলিকে। পাশাপাশি, এদিন বৈঠকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও কেন্দ্রীয় সরকার রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, কিছু কিছু রাজ্যকে কেন্দ্রীয় সরকার বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এমন অভিযোগ শুনে রীতিমতো বিস্মিত হন প্রধানমন্ত্রী। তবে বৈঠকে এ বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
অন্যদিকে, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র সমালোচনা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক হলে তো আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অংশ নিতে যান না। রাজ্যের তরফে কোনও দাবি বৈঠকে করা হয় না। অথচ সংবাদ মাধ্যমে সব ফলাও করে জানানো হয়। আসলে মুখ্যমন্ত্রী সব কিছুতেই চালাকি করেন।’
উল্লেখ্য, এর আগে দিল্লিতে হওয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের বেশির ভাগ বৈঠকেই অনুপস্থিত ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। দিলীপবাবু রীতিমতো ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘দিল্লিতে বৈঠকে গেলে কেন্দ্রীয় সরকার হয়তো বাংলাকে দেওয়া টাকার হিসেব চায়। সেই হিসেব দিতে পারবেন না বলেই হয়তো দিল্লিতে কোনও বৈঠকে তিনি যেতে চান না।’